উপন্যাসের আলো আঁধার
- তপোধীর ভট্টাচার্য
উপন্যাসের স্বর সোচ্চার নয় সর্বদা। কত নিরুচ্চারের সমাবেশ রয়েছে বয়ানে। এই দুইয়ের টানাপোড়েনে রূপান্তরিত কাহিনির আদল অহরহ খুঁজতে থাকেন ঔপন্যাসিক। এই খোঁজে সম্পৃক্ত হয়ে যায় তার নিজস্ব সময়-ভাষ্য আর যথাপ্রাপ্ত পরিসরের বিনির্মাণ। সাম্প্রতিক উপন্যাস-পাঠে বড়ো হয়ে ওঠে স্বর ও নিঃস্বরের প্রকট ও প্রচ্ছন্ন আততি। অভিব্যক্তির মধ্যে যতখানি আলো থাকে, প্রায় ততটুকু থাকে ছায়া ও অন্ধকার। ঐখানে নৈঃশব্দ্যের বসতি, প্রতীক ও চিহ্নায়কের নিগুড় উপস্থিতি। নতুন চোখে তাই তাকাতে হয় উপন্যাসের দিকে। পাঠ থেকে পাঠান্তরে গিয়ে বুঝি, কাহিনি ও কুশীলবেরা পুরোনো আধার বিদীর্ন করে নতুন তাৎপর্যে উদ্ভাসিত হচ্ছে। শরৎচন্দ্র ও জগদীশ গুপ্তের পাশাপাশি জ্যোতিরিন্দ্র নন্দী ও দীপেন্দ্রনাথ, কমলকুমার ও সৈয়দ মুস্তফা সিরাজ এর উপন্যাস-বীক্ষা অনুসরণ করে সময় ও পরিসর এর আলো-আঁধারকে নতুনভাবে চিনে নিতে পারি এই বইতে।।
এ-সময়ের পুরোধা সাহিত্যিতাত্তিক ও সমালোচক তপোধীর ভট্টাচার্য (জন্ম ১২ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৯) বাংলা সাহিত্যের যশস্বী চিন্তাবিদ। বাঙালির নিজস্ব নন্দনতত্ত্ব হিসেবে উত্তর আধুনিক চেতনার অন্যতম প্রস্তাবক তিনি। এখনও পর্যন্ত তাঁর ১৩৪টি বই প্রকাশিত হয়েছে। ‘তুমি সেই পীড়িত কুসুম’ তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ। মোট ৩২ টি কবিতা-সংকলন তাঁর রয়েছে। আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে কার্যদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন তিনি। এছাড়া দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদাবান রবীন্দ্র অধ্যাপক হিসেবেও কাজ করছেন। ছিলেন বাংলা সাহিত্যের এমেরিটাস অধ্যাপকও। নিরন্তর মনন-চৰ্চা করাই তাঁর জীবনের ব্রত। উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধ গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে : প্রতীচ্যের সাহিত্যতত্ত্ব, ঐতিহ্যের পুনর্নির্মাণ, আধুনিকতা : পর্ব থেকে পর্বান্তর, বাখতিন তত্ত্ব ও প্রয়োগ, ছোটগল্পের সুলুক-সন্ধান, উপন্যাসের সময়, উপন্যাসের বিনির্মাণ, কবিতার রূপান্তর, কবিতা : নন্দন ও সময় প্রভৃতি।